বোর্ডের নির্দেশ সত্তেও উদ্ধারে উদাসীন প্রশাসন, ১১০ বিঘা ওয়াকফ সম্পত্তি হাতিয়ে গ্রামছাড়া ৩ মোতাওয়াল্লি
বেঙ্গল রিপোর্ট ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যজুড়ে ওয়াকফ সম্পত্তি বেদখল বা জবরদখল হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। তবে তা উদ্ধার কাজের ক্ষেত্রে প্রশাসনের অনীহা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এমনই এক মারাত্মক অভিযোগ সামনে এসেছে মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙ্গা ২ নম্বর ব্লকের মিল্কি গ্রামের নবাবি আমলের এক ওয়াকফ সম্পত্তি কে ঘিরে। “শেখ আফসার হোসেন ওয়াকফ এস্টেট “মিলকি মসজিদ নামে ১১০ বিঘা সম্পত্তি নিজেদের নামে অবৈধভাবে রেকর্ড করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রাক্তন মোতাওয়াল্লি বিরুদ্ধে। সেই রেকর্ড সংশোধন করে ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধার করার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও তা বাস্তবায়িত করছে না প্রশাসন।
এক্ষেত্রে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের সর্বস্তরের আধিকারিকরা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও স্থানীয় বিডিও সমীর রঞ্জন মান্নার সঙ্গে যোগাযোগ করলে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু কি এই আসল ঘটনা? “শেখ আফসার হোসেন ওয়াকফ এস্টেট মিলকি মসজিদ। নবাবী আমলে এই সম্পত্তি ওয়াকফ করেন দানবীর আফসার হোসেন। যার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১১০ বিঘা। এর মধ্যে বেশির ভাগই হচ্ছে চাষের জমি। তাছাড়া বড় বড় পুকুর ডোবা রয়েছে। একইসঙ্গে গ্রামের ঐতিহ্য শালী মসজিদ রয়েছে। যার ইসি নাম্বার হচ্ছে ১২০৭। যেটা ওয়াকফ লিল্লাহ। অর্থাৎ পাবলিক ওয়াকফ। তারমানে এই সম্পত্তির উপর দানবীর আফসার হোসেন এর পরিবারের কোনো অধিকার থাকবে না”। এটা সম্পূর্ণ রূপে মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্পত্তি। যার সম্পূর্ণ দেখভাল করবে ওয়াকফ বোর্ড। যেটা দেখভাল করার জন্য মোতাওয়াল্লী নিয়োগ করা হয় ওয়াকফ বোর্ডের তরফে।
সেইমতো সব ঠিকঠাক চলছিল। সমস্যা দেখা দেয় ১৯৫৮ সাল থেকে। সেই সময় মোতাওয়াল্লীর দায়িত্বভার দেওয়া হয় গোলাপীর নামে এক ব্যক্তির উপর। তারপর থেকেই এই সম্পত্তি বেদখল হতে শুরু করে। একের পর এক সম্পত্তি নিজের নামে রেকর্ড করতে থাকেন গোলামপীর। পরবর্তীকালে তার তিন ছেলে বাগবুল মঞ্জুর, ইকবাল মঞ্জুর, কবির মঞ্জুর, এই সম্পত্তির মোতাওয়াল্লী হন। তাদের আমলে এই সম্পত্তির অধিকাংশ নিজেদের নামে রেকর্ড করে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
শেখ আফসার হোসেন ওয়াকফ এস্টেট এর সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাম ছেড়ে বহরমপুরে রাজার হালে বসবাস করছেন তারা। গ্রাম কেউ সর্বশান্ত করে দিয়ে গেছে এই ৩ গুণধর। এরপর এই গ্রামের কিছু শিক্ষিত যুবকের নজরে বিষয়টি আসতেই তা উদ্ধারে তৎপর হয়। গ্রামবাসীকে এই বিষয়ে সচেতন করে ওয়াকফ বোর্ড এর দ্বারস্থ হন তারা। তারপরেই গোলামপীরের ৩ গুণধর ছেলেকে মোতাওয়াল্লীর পদ থেকে সরিয়ে একটি নতুন কমিটি গঠন করে বোর্ড। সেইসঙ্গে রেকর্ড সংশোধন করে সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই কমিটির সেক্রেটারি ইউসুফ আলী ,ক্যেশিয়ার ফজলে মৌওলা ও দুই জন মেম্বার অলাউদ্দিন সেখ ও মুজিবর রহমান।ওয়াকফ বোর্ডের সেই নির্দেশ মতো (বি এল আর ও) অফিস এর দারস্থো হলেও, কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের।
বর্তমান কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন,”১১০ বিঘা সম্পতি হলেও, তার কোনো আয় ওয়াকফ বোর্ড পাছে না। অবৈধভাবে তা নিজেদের নামে করে নেয় বাগবুল, ইকবাল, কবির মঞ্জুরা। বহরমপুরে গিয়ে প্রশাসনের আধিকারিক দের প্রভাবিতো করেছেন। ওয়াকফ সম্পতি দখল করে তারা এখন জমিদার হয়ে গেছে।
তাদের কথায় প্রভাবিত হয়ে আমাদের সম্প্রদায়ের এই সম্পতি উদ্ধারে উদ্যোগী কোনো সদর্থক ভুমিকা নিচ্ছে না প্রশাসন। তাই প্রশাসনের প্রতি আস্থা হারিয়ে আদালতের দারস্থো হওআর কথা ভাবছি”। কলকাতা হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী আব্দুল মোমিন হালদার সম্পতি উদ্ধারের জন্য মসজিদের মোত্তায়ল্লি কমিটিকে আইনি সহযোগীতা করছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওয়াকফ বোর্ডের নজরে আসার পরেও ১৪ বছর কেটে গিয়েছে। এখনো সেই রেকর্ড সংশোধন কর হইনি। এবার আমার হাইকোর্ট এ মামলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। তাহলে, প্রশাসনের এই অনীহার কারন পরিস্কার হয়ে যাবে”।
এই সম্পতি উদ্ধার করার জন্য গ্রামবাসীর পাসে দাঁড়িয়েছেন এসডিপিআই-এর রাজ্য সভাপতি তহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন,”এই সম্পতি অন্যায় ভাবে বেদখল করেছে পূর্ববর্তী মতোয়াল্লীরা। আমরা দলগতভাবে গ্রামবাসীদের পাশে থেকে এই সম্পতি উদ্ধার করার চেষ্টা করছি “।তিনি আরও বলেন, রেকর্ড সংশোধনের বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগ নিতে চান বলে আমাদের জানিয়েছেন বেলডাঙা দুই নম্বর ব্লকের বিডিও সমীর রঞ্জন মান্না।তিনি বলেন, “আমকে দু-দিন সময় দেওয়া হলে, বিএলআরও-র সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে দিতে চাই। এটা অনেক দিনের সমস্যা। ঠিক কি কারনে এখনো সমাধান হচ্ছেনা জানি না।গ্রামবাসীরা আগেও আমার কাছে এসেছে। আমি বলছি, আর একবার যদি আসে, তাহলে বিএলআরও-র এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে সমস্যার সমাধান করব”।