১৮ বছর পর বীরভূমের রসকলি ধাত্রী দেবতা ভবন সংরক্ষণ করল রাজ্য সরকার
অমলেন্দু মন্ডল, বেঙ্গল রিপোর্ট বীরভুম: লাভপুর ১৫ সেপ্টেম্বর নব কলেবরে ধাত্রীদেবতা। গণদেবতা, হাঁসুলি বাঁকের উপকথার স্রষ্টার স্মৃতি বিজড়িত ভবনটির সংরক্ষণ করল রাজ্য সরকার। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়ান দিবসে সোমবার তাঁর জন্মভিটেতেই নব রূপে ধাত্রীদেবতার দ্বারোদঘাটন হল। বাম আমলে উপেক্ষিত ধাত্রী দেবতা সংরক্ষণের কাজ বাস্তবায়িত হল বর্তমান সরকারের উদ্যোগে।
রাজ্য হেরিটজ কমিশনের সুপারিশে সরকার লাভপুরে তারাশঙ্করের সাধন ক্ষেত্র ‘ধাত্রী দেবতা’-সহ অন্য স্মারকগুলির সংস্কারে টাকা বরাদ্দ করে। নব কলেবরে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধাত্রী দেবতা! প্রায় সাড়ে তিরিশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে সাহিত্যিক তারা শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধের মাটির ভবন।
সোমবার সকালে বীরভূম জেলা পরিষদের মেন্টর অভিজিৎ সিংহ নতুন ভবনের দ্বারোদঘাটন করেন। এই ধাত্রীদেবতা ভিটে ঘিরে আগামী দিনে লাভপুরে প্রভূত পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনার কথা বলছে বীরভূম জেলা পরিষদ।।
১৯৬৫ সালে পারিবারিক বাটোয়ারা সূত্রে কাছারি বাড়ি পান কথা সাহিত্যিক তারা শঙ্কর বন্দোপাধ্যায়। সাহিত্যিক নিজেই ভবনের নামকরণ করেন ধাত্রী দেবতা। দীর্ঘদিন বন্ধ পরে থাকায় ২৪০০ বর্গফুটের এই স্মৃতি বিজড়িত ভবনটির অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। ধাত্রীদেবতার দেওয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। মাটির দেওয়াল হেলে পড়ছে। সাহিত্যিকের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯৬ সালে পরিবারের সকলের ঐক্যমতে রাজ্য সরকারের হাতে ধাত্রী দেবতা সহ বিবিধ সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। কিন্ত তৎকালীন লাভপুর পঞ্চায়েত সমিতি ১৯৯৬ – ২০১৪ পর্যন্ত ধাত্রী দেবতা কে অবরুদ্ধ করে রেখে দেয। বাম আমলে অবরুদ্ধ ধাত্রী দেবতা বাঁচাতে কোন প্রকার সংরক্ষণ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরে সরকার পরিবর্তনের পর লাভপুর সংস্কৃতি বাহিনীর আবেদনে ভিত্তিতে ২০১৪ অবরুদ্ধ ধাত্রী দেবতা দরজা খোলা হয়।
লাভপুর সংস্কৃতি বাহিনীর কর্ণধার উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় বলেন, “বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বীরভূমের লাভপুরে তারাশঙ্করের স্মৃতি সংরক্ষণে আগ্রহী হয়। ২০১৮ সালে হেরিটেজ কমিশন ৩০ লক্ষ ৫৮ হাজার ৯৫৮ টাকা বরাদ্দ করে। পুরাতন মাটির বাড়ির আদলকে অটুট রেখে তৈরি হয় কঙ্ক্রিটের ধাত্রী দেবতা ভবন।”
২০১৫-তে লাভপুরের ওই স্মৃতি নিয়ে আগ্রহী হওয়ার পর তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছিল ওই বাহিনীই। তাদের তত্ত্বাবধানে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে সংগ্রহশালা। তৈরি হয়েছিল পুরোদস্তুর প্রদর্শশালাও।
বীরভূম জেলা পরিষদের মেন্টর অভিজিৎ সিংহ বলেন, “বাম আমলে উপেক্ষিত “ধাত্রী দেবতা সংরক্ষণের জন্য রাজ্য উদ্যোগী হয রাজ্য সরকার। আজ যা সম্পন্ন হল।” তারাশঙ্করের নাতি অমল শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘রাজ্য সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানাই। বাড়িটি সংস্কার না-হলে ধ্বংস হয়ে যেত।২০১২ পর্যন্ত কোন উদ্যোগ নেওয়া হয় নি। এখন ঐ ধাত্রী দেবতার সংগ্রহশালা রক্ষায় সিসিটিভি লাগানো জরুরি।
এদিনের সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে তারাশঙ্করের রসকলি অবলম্বনে নাটক মঞ্চস্থ হয় ধাত্রীদেবতা প্রাঙ্গনে। নাটকটি পরিবেশন করে বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী। আনলক ফোর বিধি মেনে, প্রকৃতির মুক্ত অঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় রসকলি। পুলিন দাস। মাথায় চুড়ো বেঁধে তীক্ষ্ম নাকে রসকলি কেটে খেলার সাথীকে বলে উঠলো, কিহে মঞ্জরী কি করো? আর মঞ্জরী বলে ওঠে, তোমায় আঁকছি যতনে অঙ্গে, যতন করে। বৈরাগী বোষ্টম বোষ্টুমীরা যাকে বলে রসকলি। আর অন্যরা বলে তিলক কাটা। সোমবার লাভপুরে প্রকৃতির অঙ্গনে মঞ্চস্থ হলো “রসকলি”।
কোন বাড়ি সুদর্শন পুলিন দাসের বাড়ি, আবার কোনটা তার খেলার সাথী মঞ্জরীর বাড়ি। মূলতঃ বৈষ্ণব বাড়ির ছবি ফুটে ওঠে ধাত্রী দেবতার অঙ্গনে। যেখানে গ্রাম্য গেরস্থালি একটি মঞ্চ, সেখানে তৈরি করা মঞ্চ না থাকায় স্বাভাবিক! তবে, ছিল আলো, আবহ সঙ্গীত। সৌমেন মজুমদার, মৌমিতা মুখোপাধ্যায় ও কাজল মুখোপাধ্যায় লাইভে মনমুগ্ধকর বৈষ্ণব পদাবলীতে মাতিয়ে তোলেন ধাত্রী দেবতাকে।